সাইলোঃ সাইলো বলতে খাদ্য শস্য সংরক্ষণের নিমিত্তে খাড়া স্থাপনাকে বুঝায়। তবে সূক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ করলে বলা যায় খাদ্য শস্য নিরাপদে দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য ও দ্রুতগতিতে গ্রহণ ও বিতরণের জন্য আধুনিক যান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন খাড়া স্থাপনাই সাইলো।
সাইলোতে শস্য সংরক্ষণে নিম্নের সুবিধা সমুহ পাওয়া যায়ঃ
বাংলাদেশে বর্তমানে ৬ টি সাইলো আছে। চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, আশুগঞ্জ , সান্তাহার, মোংলা ও খুলনায় একটি স্টীল সাইলো আছে। আধুনিক পৃথিবীর সাথে তাল মেলাতে, একটি জনবহুল রাষ্ট্রের জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ও সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে অদূর ভবিষ্যতে নির্মিত হবে আরো আটটি সাইলো।
নারায়ণগঞ্জ সাইলোঃ
খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তরাধীন নারায়ণগঞ্জ সাইলো একটি “১-গ শ্রেণীভূক্ত কেপিআই (Key Point Installation), যা বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য বিভাগের একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, যার ধারণক্ষমতা ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) মেঃটন।
নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্র সংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীরে ১২.৯১ একর জায়গায় সাইলোটি অবস্থিত। জাতীয় বেতন স্কেলের ৫ম গ্রেডভুক্ত ১ জন কর্মকর্তা সাইলোর প্রশাসনিক প্রধান । সাইলো অধীক্ষকের তত্ত্বাবধানে ১ জন রক্ষণ প্রকৌশলী, ৪ জন সহকারী রক্ষণ প্রকৌশলী, ১ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ১ জন নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও ১ জন খন্ডকালীন ডাক্তারসহ সর্বমোট ৩৮৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী সমন্বয়ে এ প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়।
প্রশাসনিক উইং, অপারেশনাল উইং, রক্ষণাবেক্ষণ উইং ও নিরাপত্তা উইং এ চার ভাগে সমগ্র সাইলোর কার্যক্রম সাধারণ পালা (সকাল ৯:০০ - বিকাল ৫:০০ টা পর্যন্ত), ‘ক’ পালা (সকাল ৬:০০ টা- দুপুর ২:০০ টা), ‘খ’ পালা (দুপুর ২:০০ টা- রাত ১০:০০ টা), ‘গ’ পালা (রাত ১০:০০ টা- সকাল ৬:০০ টা) ওয়ারী চালু থাকে।
বিদেশ থেকে আমদানীকৃত/অনুদানে প্রাপ্ত খাদ্য শস্য তথা গম চট্রগ্রাম সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমে চট্রগ্রাম গ্রেইন সাইলো হতে নৌ পথ/রেল পথ/সড়ক পথে নারায়ণগঞ্জ সাইলোতে গ্রহণ করা হয়। কমান্ড এরিয়া হিসেবে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা মজুদ গড়ে তোলা হয় এবং খাদ্য শস্য নিরাপদে সংরক্ষণ করা হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অন্যান্য জরুরী পরিস্থিতি মোকাবিলায় চাহিদা অনুযায়ী সরকারি/খাদ্য মন্ত্রণালয়/খাদ্য অধিদপ্তরের আদেশের প্রেক্ষিতে মজুদকৃত খাদ্য শস্য দ্রুত দেশের বিভিন্ন এলএসডি (Local Supply Depot)/সিএসডি (Central Storage Depot)/সাইলোতে সরবরাহ করা হয়।
স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতির মাধ্যমে নৌ/রেল/সড়ক পথে গম গ্রহণ, সংরক্ষণ, বিলি/বিতরণ এবং প্রেরণ করা হয়। এখানে দিন-রাত ২৪ ঘন্টা পালা ক্রমিক অপারেশন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বিসিএস (খাদ্য-কারিগরী) ক্যাডারের প্রারম্ভিক স্তরের কর্মকর্তাগণ পালা-ইনচার্জ এর দায়িত্ব পালন করে থাকেন। সকল স্তরে অপারেশন কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে করা হয়ে থাকে। নিউমেটিক আনলোডার, আধুনিক ব্যাগিং ও স্টিচিং প্ল্যান্ট, কম্পিউটারাইজড হপার স্কেল ও ট্রাক ওয়ে ব্রীজ সাইলোতে বিদ্যমান। নিউমেটিক আনলোডার এর মাধ্যমে গম খালাস করা হয়। কম্পিউটারাইজড হপার স্কেল দ্বারা গম ওজন করে বিনে সংরক্ষণ করা হয়। ট্রাক ওয়ে ব্রীজ দ্বারা ট্রাকে বোঝাইকৃত গম পুনরায় ওজন করে বিলি বিতরণ ও প্রেরণ করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ সাইলোতে মোট ৮৪ টি বিভিন্ন প্রকার ও সাইজের বিন আছে। এগুলোর মধ্যে ৪৮ টি রাউন্ড বিন (উচ্চতা ১৫০', ব্যাস ২০') যার প্রতিটির ধারণক্ষমতা ৭৫০ মে. টন; ২৮ টি ষ্টার বিন যার প্রতিটির ধারণ ক্ষমতা ৪৫০ মে. টন এবং ৮ টি হাফ ষ্টার বিন যার প্রতিটির ধারণ ক্ষমতা ১৭৫ মে. টন। রাউন্ড বিন, ষ্টার বিন ও হাফ ষ্টার বিন সমূহের মোট ধারণ ক্ষমতা যথাক্রমে ৩৬,০০০ মে. টন, ১২,৬০০ মে. টন ও ১৪০০ মে. টন।
সরকারি জরুরী প্রয়োজনে ছুটির দিনে বিশেষ ব্যবস্থায় অপারেশনাল ও রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত সাইলোর জরুরী কার্যক্রম চালু রাখা হয়।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস